বাংলাদেশের গর্ব এবং প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি হলো সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল এবং শ্বাসমূলীয় বনের রহস্যময় পরিবেশ পর্যটকদের সবসময়ই টানে। ২০২৬ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে ঢাকা থেকে সুন্দরবন যাওয়া এখন আর দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার নয়, বরং কয়েক ঘণ্টার স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ।
কেন সুন্দরবন যাবেন? সুন্দরবন ভ্রমণ মানেই শুধুই জঙ্গল দেখা নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ লাইফস্টাইল ট্যুর। এখানে আপনাকে জাহাজে বা বোটে রাত কাটাতে হয়, যা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বনের নিস্তব্ধতা, হরিণের পাল, বানরের চঞ্চলতা এবং ভাগ্য ভালো হলে বাঘের দেখা পাওয়া—সব মিলিয়ে এটি একটি থ্রিলিং প্যাকেজ।
ঢাকা থেকে যাওয়ার উপায় (২০২৬ আপডেট)
২০২৬ সালে সুন্দরবন যাওয়ার জন্য মোংলা বা খুলনা পৌঁছানো এখন খুবই সহজ।
১. সরাসরি বাস (পদ্মা সেতু হয়ে): পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে খুলনা বা মোংলা যাওয়া এখন মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার পথ। সায়েদাবাদ বা গুলিস্তান থেকে হানিফ, এনা, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস বা ফাল্গুনী পরিবহনের এসি বাসগুলো সরাসরি মোংলা বন্দরে নামিয়ে দেয়। আগে যেখানে সারাদিন বা সারারাত লাগত, এখন সকালে রওনা দিলে দুপুরেই আপনি সুন্দরবনের গেটওয়েতে পৌঁছে যাবেন।
২. ট্রেন ভ্রমণ (মোংলা রেল সংযোগ): ২০২৬ সালে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্রেন এক নতুন দিগন্ত। ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা বা নবনির্মিত মোংলা রেললাইন দিয়ে ট্রেনে করে আপনি বন্দরের খুব কাছে পৌঁছে যেতে পারেন। ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ বা ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রা নিরাপদ এবং আরামদায়ক।
ভ্রমণ পদ্ধতি ও থাকা: সুন্দরবন ভ্রমণ সাধারণত প্যাকেজ ট্যুর হিসেবেই হয়। মোংলা বা খুলনা ঘাট থেকে বিভিন্ন মানের টুরিস্ট ভ্যাসেল বা জাহাজ ছাড়ে।
- জাহাজে থাকা: সুন্দরবন ভ্রমণে থাকার মূল মজাটাই হলো জাহাজে। আধুনিক জাহাজগুলোতে এসি কেবিন, ভালো মানের খাবার এবং গাইড থাকে। ৩ দিন ২ রাতের প্যাকেজে বনের গহীনে ঘুরে বেড়ানো এবং জাহাজে রাত্রিযাপন এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি।
- ইকো-রিসোর্ট: যারা জাহাজে থাকতে চান না, তারা মোংলার কাছে বা সুন্দরবনের সীমান্তে গড়ে ওঠা ইকো-রিসোর্টগুলোতে থাকতে পারেন এবং দিনে দিনে করমজল বা হারবারিয়া ঘুরে আসতে পারেন।
জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানসমূহ:
- করমজল: বনের শুরুতে অবস্থিত, এখানে ওয়াচ টাওয়ার, কুমির প্রজনন কেন্দ্র এবং কাঠের ট্রেইল আছে।
- হারবারিয়া: এখানে বাঘের পায়ের ছাপ প্রায়ই দেখা যায়।
- কটকা ও কচিখালি: বাঘ ও হরিণ দেখার সেরা জায়গা। এখানকার জামতলা সৈকতটি খুবই নিরিবিলি ও সুন্দর।
- দুবলার চর: শুটকি পল্লী এবং রাস মেলার জন্য বিখ্যাত।
ভ্রমণ টিপস: সুন্দরবন ভ্রমণের সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। জঙ্গলের ভেতরে উচ্চস্বরে কথা বলা বা গান বাজানো নিষেধ। উজ্জ্বল রঙের পোশাক না পরে জঙ্গলের রঙের সাথে মিশে যায় এমন পোশাক (যেমন- সবুজ, খয়েরি) পরা ভালো। অবশ্যই ভালো কোনো ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।